গোলাঘাটিঃ
শহীদ কৃষকদের সন্মানে নির্মিত শহীদ স্মৃতি উদ্যান আজ জলাজঞ্জাল আর গবাদি পশুদের বিচরনভূমিতে পরিনত। সংস্কারের কোন পদক্ষেপ নেই রাজ্য সরকারের। সিপাহীজলার গোলাঘাটির দয়ারামপাড়ায় ১২ জন শহীদ কৃষকের মৃত্যুর স্মৃতিতে বিগত বাম সরকারের আমলে গড়ে উঠেছিল গোলাঘাটি শহীদ স্মৃতি উদ্যান। ইতিহাসের স্মৃতিচারন করলে জানা যায়, রাজন্য আমলে মহাজন প্রথার প্রচলন থাকায়, মহাজনদের কাছ থেকে মোটা সুদের বিনিময়ে কৃষি কাজ করতেন স্থানীয় কৃষকরা। অক্লান্ত পরিশ্রমে মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে ফলিত ফসল চলে যেত মহাজনের গোদামে। ১৯৪৮ সালে রাজ্যে প্রচন্ড খরা দেখা দেয়। প্রায় তিন বছরের এই খরায় গোলাঘাটির কৃষকদের ফলন অনেকাংশে কমে যায়। কিন্তু এলাকার এক পাষণ্ড মহাজন হরি সাহা জোড় পূর্বক কৃষকদের ফসল কেড়ে নিয়ে যায়। কৃষকরা কাকতি মিনতি জানায় মহাজনের কাছে, এবছর আমাদের ছাড় দিন মহাজন, নয়তো ছেলেমেয়েরা না খেয়ে মরবে। কিন্তু পাষণ্ড মহাজনের হৃদয় এতটাই কঠোর ছিল পুলিশের সহযোগিতায় জোরপূর্বক কৃষকদের ফসল তুলে নিয়ে আসে। আর তখনই পরিবারের দাগিদে বিক্ষোভ শুরু করে কৃষকরা। কৃষকদের বিক্ষোভ চরম আকার ধারন করলে মহাজন হরি সাহার নির্দেশে কৃষকদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। আর নির্মম সেই ঘটনায় ১২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়। সেই কৃষকদের স্মৃতিতেই গোলাঘাটির দয়ারামপাড়ায় গড়ে উঠেছিল কৃষক শহীদ স্মৃতি উদ্যান । তৎকালীন বাম সরকারের উদ্যোগে ত্রিপুরার পর্যটন দপ্তরের টাকায় গড়ে উঠেছিল উদ্যানটি। ত্রিপুরার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে রাজ্যবাসীর অন্যতম পছন্দের স্থানও হয়ে উঠে উদ্যানটি। রাজ্যের অনেক পর্যটকরা বনভোজনে যেতেন সেখানে। কিন্তু বর্তমানে অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে উদ্যানটি জঙ্গলের স্তুপে পরিনত হয়ে আছে। খসে পড়ছে কৃষকদের স্মৃতিতে তৈরী স্মৃতিসৌধটি। গবাদি পশুর বিচরনভুমিতে পরিনত হয়ে আছে কৃষকদের আত্মবলিদানের স্মৃতিতে গড়ে উঠা এই উদ্যান। স্থানীয়দের আবেদন উদ্যানটি সংস্কারে যেন রাজ্যের বর্তমান সরকার হাত লাগায়।