Home BREAKING NEWS ‘উড়ান’-এর বিতর্ক সভায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

‘উড়ান’-এর বিতর্ক সভায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

by News On Time Tripura
0 comment

আগরতলাঃ

বিতর্ক সভা। তাও আবার প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ। বাঙালি তো আকৃষ্ট হবেই। আগরতলা টাউনহলে প্রায় হলভর্তি মানুষের উপস্থিতিতে তিন ঘন্টার সমৃদ্ধ  আলোচনায় রবিঠাকুর যেন অষ্টম বারের মত ত্রিপুরায় এলেন।

প্রখ্যাত চিকিৎসক, সুবক্তা, সমৃদ্ধ আলোচক ডাঃ কুণাল সরকার ছিলেন পরিচালনার দায়িত্বে। প্রথমেই উদ্বোধনী পর্বে উড়ানের সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী সাহা রায়। পরে সভাপালক ডাঃ কুণাল সরকারের পরিচালনায় শুরু হয় বিতর্ক সভা।

বিতর্কের বিষয় “রবীন্দ্রনাথ যতটা জনপ্রিয়, ততটা প্রাসঙ্গিক নন” । বিষয়ের পক্ষে আলোচনা করেন ইপ্সিতা ঘোষ, শুভ্রজিত ভট্টাচার্য, অর্কপ্রভ সরকার, অশোক দেব এবং জহর সরকার। এবং বিপক্ষে বলেন দেবারতি মুখোপাধ্যায়, নন্দিনী ভট্টাচার্য, ড: তমোজয় ব্রক্ষ্ম, শাণিত দেবরায় এবং ড: বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

আলোচনার প্রথমেই একপ্রকার ঝড়ো ইনিংসের মত বির্তকের শুরু করেন রাজ্যের এক উদীয়মান সুবক্তা ইপ্সিতা ঘোষ। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রতিনিধি হয়ে যুব পার্লামেন্টে জোড়ালো আলোচনা রেখে নিজের বিচক্ষণতা চিনিয়েছিলেন ইপ্সিতা। শনিবারের বিতর্ক সভার মঞ্চেও সেই একই প্রতিভা পরিলক্ষিত হল। ইপ্সিতার পক্ষে আলোচনা করার পর বিপক্ষে বলতে আসেন কলকাতার উদীয়মান লেখক, আলোচক দেবারতি মুখোপাধ্যায়। ত্রিশ খানার উপর বই প্রকাশ হয়েছে তাঁর। নিউ এডুকেশন পলিসিতে রবীন্দ্রনাথকে ব্রাত্য রাখার যুক্তিতে ইপ্সিতা যখন তার তর্কে রবিঠাকুরকে অপ্রাসঙ্গিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তখন সেই পলিসিতে ইনক্লুসিভ এডুকেশন যে রবি ঠাকুরের নীতির প্রতিফলন তা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে প্রাসঙ্গিক করলেন দেবারতি।

আলোচনা করতে গিয়ে রাজ্যের বিশিষ্ট সঞ্চালক, সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভ্রজিত ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথকে অপ্রাসঙ্গিক করার পেছনে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় মানুষের মানসিকতাকে দায়ী করেছেন। রাজ্যের সাথে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় সম্পর্ক থাকার পরেও রাজ্যে একটিও রবীন্দ্র সংগ্রহালয় না থাকার কারনে রবীন্দ্রনাথকে অপ্রাসঙ্গিক করার পেছনে রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষা করার মানসিকতাকে দায়ী করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিপক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে নন্দিনী ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক এবং সময়ের আগে ভাবনার প্রতিক হিসেবে তুলে ধরে তাঁকে আরও বেশী প্রাসঙ্গিক হিসেবে তুলে ধরেন।

সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় পশ্চিমবাংলার সাংবাদিক অর্কপ্রভ সরকার আলোচনায় রবীন্দ্রনাথের জাতিয়তাবাদ এবং মানবতাবাদকে বর্তমান সময়ে অপ্রাসঙ্গিক বলে তুলে ধরেন। ঠিক অন্যদিকে রাজ্যের বরিষ্ঠ সাংবাদিক শানিত দেবনায় বলেন রবীন্দ্রনাথ জনপ্রিয় এটাই প্রমান করে তিনি প্রাসঙ্গিক। তাছাড়া পৃথিবীর সকল প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রবীন্দ্র চর্চা এই বিষয়ে প্রমান বহন করে যে তিনি আজও প্রাসঙ্গিক।

পক্ষে আলোচক অশোক দেব রবীন্দ্রনাথের উপর রীতিমত আক্রমণ শানিয়ে তুলেন। রবীন্দ্রনাথকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তিনি তার ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের বদলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বেশী প্রাসঙ্গিক হিসেবে দাবী করেন। তবে বিপক্ষে বলতে গিয়ে তার যুক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক বলেই দাবী করেন বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার তাঁর আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষিত এবং অপ্রাসঙ্গিক বলেছেন।

বক্তাদের তথ্যভিত্তিক আলোচনার পর ডিসকাসেন্ট হিসেবে আলোচনা রাখেন সিডিসি’র পক্ষ থেকে প্রদীপ গুপ্ত। পরে উভয় পক্ষ থেকে সামআপ আলোচনা রাখেন যথাক্রমে দেবারতী মুখোপাধ্যায় এবং অশোক দেব।

উভয় পক্ষের তথ্য সমৃদ্ধ বিতর্কের পর দর্শকদের ভোটে বিতর্ক সভা টাই বলে ঘোষনা করেন সভাপালক ডাঃ কুনাল সরকার।

সবশেষে ত্রিপুরায় লেখা রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনন্য এই আয়োজনের ইতি টানা হয়।

তবে রাজ্য এবং পশ্চিমবাংলার বিদগ্ধ আলোচকদের সমৃদ্ধ আলোচনায় রবিঠাকুর যেন অষ্টম বারের মত রাজ্যে এসেছিলেন সেই সন্ধ্যায়। আর হলভর্তি আগরতলা টাউনহল এদিন সাক্ষী থাকে সেই বিশেষ আয়োজনের। বাংলা এবং বাঙালীদের কাছে বিতর্ক এক অভ্যাস। কিন্তু তাকে গঠনমূলক ভাবে তুলে ধরে নতুন প্রজন্মেকে বিচক্ষণ এবং সঠিক তথ্য সমন্বিত তার্কিক মানসিকতায় গড়ে উঠতে সাহায্য করবে ‘উড়ানে’র এই ধরনের আয়োজন।  

You may also like