আগরতলাঃ
ভারতের স্বাধীনতার সময় ত্রিপুরা ছিল রাজন্য শাসিত স্বাধীন দেশীয় রাজ্য। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ত্রিপুরা ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেয়। রাজতন্ত্রের অবসান ও গণতন্ত্রের সূচনায় রাজ্যের মানুষের দায়িত্ব চলে যায় ভারত সরকারের ওপর। তখন একটি প্রশ্ন সামনে আসে জনগণের দায়িত্ব তো নিয়ে নিলো দেশের সরকার কিন্তু রাজকোষ থেকে যে সব মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে তার দায়িত্ব কে নেবে?
তখন সিদ্ধান্ত হয় যে রাজকোষ থেকে পরিচালিত সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেবে ত্রিপুরা সরকার। সেই থেকে এখনও এই রীতি চলে আসছে। মন্দিরের নিত্য পূজা থেকে উৎসবের যাবতীয় খরচ বহন করে রাজ্য সরকার।
ত্রিপুরা রাজ্যের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো হল খার্চি পুজো। খার্চি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল, খার ও চি। খার কথার অর্থ হল পাপ এবং চি কথার অর্থ হল মোচন করা। এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে এক কথায় পাপ মোচন করা হয়।
১৪ জন দেবদেবীকে এক বেদীতে প্রতিস্থাপন করে যে পূজা অনুষ্ঠান হয় সেটি ‘খার্চী পূজা’ নামে পুরো ভারতবর্ষে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে৷ চতুর্দশ দেবদেবী প্রতিস্থাপিত মন্দিরকে অভিহিত করা হয় ‘চতুর্দশ দেবতার মন্দির’ হিসাবে৷ ত্রিপুরার নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা ‘ত্রিপুরাব্দ’ অনুসারে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি থেকে আগরতলার চতুর্দশ দেব মন্দিরে খার্চী পূজা শুরু হয় এবং সাত দিনব্যাপী চলে পূজা ও মেলার আয়োজন৷ চতুর্দশ দেব মন্দিরে স্থাপিত দেবদেবীরা হচ্ছেন : ১. সিবরাই (মহাদেব), ২. সংগ্রাংমা (কালী), ৩. হাচুকমা (বসুন্ধরা), ৪. সুকুন্দ্রাই (কার্তিক (দেবতা)), ৫. মুকুন্দ্রাই (গণেশ), ৬. তোয়বুকমা (জলদেবী বা বারুণী), ৭. মাইলুকমা (লক্ষ্মী দেবী), ৮. ইরিত্রা (অগ্নি দেব), ৯. বিরিত্রা (পবনদেব), ১০. কালাকতর (মহাকাল), ১১. কালারী (যম (হিন্দুধর্ম)), ১২ রন্দকা (কুবের), ১৩. দন্দকা (কামদেব) ও ১৪. বণিরক (অশ্বিনীকুমারদ্বয়)৷
জাতি জনজাতির মেলবন্ধনে খার্চি পুজা প্রাঙ্গন এই রাজ্যের অখন্ডতা এবং সম্প্রীতির এক সুমধুর বার্তা বহন করে। ধর্ম জাতি ভাষা এবং খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্নতা থাকলেও মানবিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবনায় এই রাজ্য আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ , তা এই মেলায় এসে অতি সহজেই বোঝা যায়।