বক্সনগরঃ
হাজার হাজার মানুষের চোখের জাল ,বুকফাটা কান্না আর শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় নিলেন সোনামুড়া মহকুমার বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক , সিপিআইএম নেতা শামসুল হক। গতকাল রাত প্রায় ২ টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আগরতলার জিবি হাসপাতালে ৬৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। জননেতার প্রয়ানে শোকস্তব্ধ সোনামুড়া। শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা।
মঙ্গলবার রাত প্রায় ২ টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আচমকাই প্রয়াত হয়েছেন বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে বিধায়ক,সিপিআইএম নেতা শামসুল হক। এই দিনই নিজের প্রায়ত পুত্রের স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রন্ত বিষয়ে আগরতলা গিয়েছিলেন তিনি। রাতে আগরতলার সরকারি আবাসে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কিছুক্ষনের মধ্যে মৃত্যু হয় তার। এখবর ছাড়িয়ে পড়তে শোকের ছায়া নেমে আসে সোনামুড়া সহ গোটা রাজ্যজুড়ে। পরিচিত পরিজনেরা রাতেই ভিড় জমান সোনামুড়ার কুলুবাড়িস্থিত তার বাসভবনে। আজ সকালে বিধানসভা ভবন হয়ে সিপিআইএম রাজ্য দপ্তর, এর পর বক্সনগরের কলসিমুড়া বাজারে নিয়ে আসা হয় তার মৃতদেহ। এই বক্সনগরের সাথেই জড়িত ছিল তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। গ্রাম প্রধান থেকে শুরু করে , বক্সনগর পঞ্চায়েত সমিতির নির্বনাচিত চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারপার্সন হিসেব দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন তিনি। ছিলেন সিপাহীজলা জেলা পরিষদের সদস্য। সর্বশের ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই বক্সনগর কেন্দ্র থেকেই প্রথমবারের মতো বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বাম আমলে এই কেন্দ্রটি থেকে একাধিকবার জয়ী হয়ে তার রাজনৈতিক স্বতীর্থ শাহিদ চৌধুরী মন্ত্রী এবং বিধায়ক হলেই তিনিই ছিলেন কিং মেইকার। সদাহাস্যময় এই জনদরদী নেতাকে আজ শেষ বারের মতো বক্সনগরের কলসিমুড়া বাজারে নিয়ে আসলে শেষ শ্রদ্ধা জানান সিপিআইএম,বিজেপি ,কংগ্রেস ,তিপ্রা মথা সহ সব দলের নেতারা। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিজেপির সিপাহীজলা জেলা দক্ষিণাংশ কমিটির সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য্যে প্রয়াত শামসুল হক’কে জননেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন তার প্রয়ানে সোনামুড়া মহকুমার সামাজিক ক্ষেত্রেও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কারন তিনি তার জীবনদশায় মানুষের মনে দাগ কাটতে পেরেছিলেন।
বক্সনগর থেকে প্রায়ত নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সোনামুড়ার সিপিআইএম মহকুমা দপ্তরে। দলীয় ভাবে এটাই ছিল তার বড় কর্মস্থল। প্রয়াত শামসুল হক ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ১৯৭৪ সালে সিপিআইএম দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তার পরবর্তী সময় দলের মহকুমা কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীতে স্থান করে নিতে পড়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ ছিলেন সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য ও কৃষক সভার সোনামুড়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক। তার মৃতদেহ নিয়ে সোনামুড়া শহরে শোক মিছিল করেছেন দলীয় কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সদাহরন মানুষ । হাজার হাজার মানুষ শেষ দেখা দেখেছেন দলীয় অফিসে এসেও। শেষ শ্রদ্ধা জানান কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী বিল্লা মিয়া। সোনামুড়াতে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম বিলোনিয়া মহকুমা সম্পাদক তাপস দত্ত ,প্রাক্তন বিধায়ক সুধন দাস ,প্রাক্তন মন্ত্রী রতন ভৌমিক সহ সিপিআইএম সোনামুড়া মহকুমা কমিটির সর্বস্তরের নেতারা। সিপিআইএম মহকুমা সম্পাদক রতন সাহা এই জননেতার প্রায়নকে দলের এবং সোনামুড়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছে মানুষের সেবাই আজীবন ব্রতী ছিলেন সিপিআইএমের এই নেতা।
সিপিআইএম সোনামুড়া মহকুমা দপ্তরের পর প্রায়ত বাম নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার নিজ গ্রাম কুলুবাড়িতে। স্থানীয় স্কুল মাঠে জানাজার নামাজের পর ইসলামিক রীতি মেনে সমাধিস্থ করা হয় তাকে।