কৈলাশহরঃ
( দীপেন দেব- এর প্রতিবেদন )
গত ডিসেম্বর মাসে (২০২৩) রাজ্যে আরও মাসিক ২০০০ টাকা করে সামাজিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। যা সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষামন্ত্রী টিঙ্কু রায়। মন্ত্রী টিংকু রায় এও জানান নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার সামাজিক ভাতা প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে বছরে ৭৮৬ কোটি টাকা।সামাজিক ভাতার মধ্যে বিধবা ভাতা পাবেন ১৬৫৩ জন, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা ৫৩৮৮ জন, বয়স্ক ভাতা ১৪,১৯৭ জন পাবেন। তার মধ্যে ৪২০ জন অবিবাহিত মহিলাদের ভাতা দেওয়া হবে, দিব্যাঙ্গ ভাতা ১৯৪৬ জন পাবেন।
সরকারি ঘোষণা থাকলেও সরকারি সব সুবিধাই যেন গৌরনগর আরডি ব্লকের অন্তর্গত হিরাছড়া পঞ্চায়েতের কাঁঠালটিলা গ্রামে অধরা । পূর্ত দপ্তরের ঝা-চকচকে রাস্তা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার মেঠো পথ পেরিয়ে কাঁঠালটিলায় মারাক জনজাতি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পরিবারের বসবাস। খবর সংগ্রহ এবং সত্য ঘটনা জনসমক্ষে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার কাজ। আর সেই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা মাথায় নিয়েই আজ সকালে প্রত্যন্ত এলাকা তথা ৫৩ বিধানসভা কেন্দ্রের হিরাছড়া এডিসি গ্রামের কাঁঠালটিলা এলাকায়। অনেকটা পথ হাটার পর হঠাৎ দেখা মারাক জনজাতির এক ৭০ উর্ধ্ব বৃদ্ধার সাথে। সরকারী সুযোগ সুবিধা কি পেয়েছেন বা রাজ্যের সরকারের কাছে কি দাবী,জানতে চাইলে জনজাতি সম্প্রদায়ের বৃদ্ধা রেজিনা মারাক জানান প্রায় ৯ বছর হল স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। বয়সের ভারে এখন আর জঙ্গলে গিয়ে কাজ কর্ম করা সম্ভব হয়না। আধো আধো বাংলায় কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন “সিপিএম আমলে ভাতা পাইছে,অখন আর পায়না”! উনার কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য বোধ হল।রাজ্য সরকার যেহেতু আরো প্রায় ৩০ হাজার সামাজিক ভাতার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে কেন পাচ্ছেননা এই বৃদ্ধা ভাতা ? সেই বিষয়ে উনার কাছে জানতে চাইলে উনি জানান আগের সরকার অর্থাৎ বামফ্রন্ট আমলে উনি ভাতা পেতেন কিন্তু রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় বছর খানেক পর বন্ধ হয়ে যায় উনার বয়স্ক/বৃদ্ধ ভাতা।তবে কি কারনে উনার ভাতা বন্ধ হয়েছে সে বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কোনো স্পষ্টিকরণ দেয়নি। এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বহবার জানিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমানে বয়সের ভারে আর পঞ্চায়েত অফিসেও যেতে পারেননা তাই আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে উনার বয়স্ক ভাতার আবেদন করেছেন।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা ও বার্ধক্য-সহ দীর্ঘকালীন সরকারি অনুদান পাওয়ার ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ব্লকের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করে নবীকরণ রিপোর্ট পাঠাতে হয় জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরে। পঞ্চায়েতের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে জীবিত উপভোক্তাদের ভাতা অথবা অনুদান চালু থাকে। এই ক্ষেত্রে রেজিনা মারাকরা বার বার তাদের বয়সের নথিপত্র সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কে দেওয়ার পরও কেন পাচ্ছেননা বয়স্ক/বৃদ্ধ ভাতা,সে প্রশ্নই এখন সর্বত্র। নাকি দীর্ঘকালীন সরকারি অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে গৌরনগর আরডি ব্লক তাদের মর্জিমাফিক লোকদের ভাতা প্রদান করছে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
তবে প্রথম বার মন্ত্রী হওয়ার পর এখন পর্যন্ত রাজ্যের সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী টিঙ্কু রায়ের যে ট্রেক রেকর্ড রয়েছে তাতে বলা যায়,এধরনের সংবাদ উনার সমক্ষে আসার সাথে সাথেই উনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাতা প্রাপকদের সরকারী অনুদানের অর্ডার কপি নিজে গিয়ে বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। এবার দেখার বিষয় রেজিনা মারাকও কি পাবেন মন্ত্রীর হাত ধরে উনার বৃদ্ধ/বয়স্কা ভাতা?