কৈলাশহরঃ অভাবী সংসারে মা বাবার সাথে এক ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। এতটুকু ঠিক রয়েছে। সংসারের আর যেন সবই অমিল। কারণ, সংসারে ছয় বছরের একমাত্র ছেলের হাত এবং পা থাকলেও ছেলেটি হাঁটতে পারে না, ছেলেটি বসতে পারে না, ছেলেটি নিজে নিজে খেতেও পারেনা, ছেলেটি ভালো করে কথাও বলতে পারেনা এবং ছেলেটি খেলাধুলাও করতে পারেনা। স্থানীয় আশা কর্মীরাও কোনো খোঁজ খবর নেয় না। পাশাপাশি সংসারে দুই মেয়ে থাকলেও তাদের বই, খাতা, কলম, জামা কাপড় কিছুই নেই। তারপরও বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং ছোট মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। দুই বোন কোনো দিন ফেলও করেনি এবং দুই বোন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দুই বোনের ভালো জামা কাপড় নেই বলে বাড়ি থেকে বের হয়না। বোনেদের পর্যাপ্ত ড্রেস না থাকায় এক ড্রেস জলে ধুয়ার পর ড্রেসটি শুকানোর পর অপর ড্রেসটি পরিধান করে। অর্থের অভাবে ভালো প্রাইভেট মাস্টারের সাহায্য সহযোগিতা নিতে পারেনা। নিজের চেস্টাতেই দুই বোন পড়াশোনা করে। বাড়িতে প্রতিদিন ভালো করে তিনবেলা খাবার জুটে না। মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন এবং বাবা ই-রিক্সা চালান। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল বি.পি.এল পরিবার হওয়া স্বত্বেও ছয় বছরের ছেলেটি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কেউ আজ অব্দি কোনো ধরনের ভুমিকা নেয় নি। এমনকি মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করা স্বত্বেও মাকেও পরিচারিকার ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় নি। পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকবার স্থানীয় পঞ্চায়েতে আবেদন করার পর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা মায়ের পরিচারিকার ভাতার ব্যবস্থা করে দেয় নি। পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েত সদস্য সহ শাসক দলের নেতা নেত্রীদের কাছে কয়েকবার যাবার পরও কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা কিংবা আশ্বাস না পাওয়ায় নিরুপায় এবং হতাশ হয়ে পড়েন পরিবারটি। অসহায় নিরীহ গরীব দুঃস্থ এই পরিবারটি হলো ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরের গৌরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কৈলাসহরের চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে গৌরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচ নং ওয়ার্ডের কামরাঙ্গা বাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কৃপেশ মালাকার এবং অর্চনা মালাকার। বাবা কৃপেশ মালাকার পেশায় ই-রিক্সা চালক এবং মা অর্চনা মালাকার অন্যের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন। অর্চনা দেবীর ছয় বছরের কৃষান মালাকার জন্মের পর থেকে আজ অব্দি হাঁটতে পারে না, দাঁড়াতেও পারেনা, নিজে নিজে খেতেও পারেনা, এবং ভালো করে কথাও বলতে পারে না এবং খেলাধুলাও করতে পারে না। ছয় বছরের এই প্রতিবন্ধী ছেলেটির প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বের করতে অনেকের কাছে গেলেও অর্চনা দেবীকে কেউ সাহায্য সহযোগিতা করে নি। বহু কষ্টে অর্চনা মালাকার গত বছরের পঁচিশ এপ্রিল ছেলের ষাট শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বের করে। কিন্তু প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বের করে কি আর হবে, আজ অব্দি ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারি কোনো সাহায্য পাননি কিংবা কেউ এগিয়েও আসেনি।
ছয় বছরের প্রতিবন্ধী ছেলের সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পেয়ে নিজের পরিচারিকা ভাতার জন্য পঞ্চায়েতের কাছে কয়েকবার লিখিত ভাবে আবেদন করলেও আজ অব্দি কোনো ধরনের ব্যবস্থা হয়নি। স্বামী কৃপেশ মালাকার ই-রিক্সা চালিয়ে প্রতি মাসে ই-রিক্সার কিস্তি সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যাংকে দিয়ে পরিবার চালানো খুবই কষ্ট হচ্ছে বলে জানান অর্চনা দেবী। ছয় বছরের প্রতিবন্ধী ছেলেকে চরম অশান্তি নিয়ে বসবাস করার পাশাপাশি অর্চনা দেবীর বাড়ির পাশে রামকমল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে বড় মেয়ে এবং দশম শ্রেণিতে ছোট মেয়ে পড়াশোনা করছে। অভাবের তাড়নায় দুই মেয়ে ভালো করে পড়াশোনাও করতে পারছে না। অর্থের অভাবে মেয়েদের বই, খাতা, কলম এবং ভালো মাস্টার দিতে পারছেন না। ২০১৮সালে রাজ্যে বিজেপি দলের সরকার প্রতিষ্ঠার পর অর্চনা দেবী প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটি ঘর পেয়েছেন ২০২২সালের শেষ দিকে। এই ঘরটির নির্মান কাজ বর্তমানে চলছে। তাছাড়া বিজেপি সরকার আসার পর অর্চনা মালাকার বাড়িতে একটি শৌচালয়ও পেয়েছেন বলে জানান। কিন্তু ছয় বছরের প্রতিবন্ধী কৃষান মালাকারকে বাঁচানোর জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা ছেলের চিকিৎসার জন্য এবং দুই মেয়ের পড়াশোনা চালানো জন্য কোনো সংগঠন কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা ব্যাক্তিগত ভাবে কেউ এগিয়ে এলে হয়তোবা অর্চনা দেবীর ছয় বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে সহ গোটা পরিবার সমাজের অন্য দশটা পরিবারের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে বলে অনেকেরই অভিমত। তবে, পরিবারের এই করুন ইতিহাস সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানাতে গিয়ে কাতর ভাবে কয়েকবারই অর্চনা দেবী জানান যে, স্থানীয় চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা জনপ্রিয় জনদরদী মন্ত্রী টিংকু রায় যদি একটু খোঁজ নিতেন তাহলে নিশ্চিত ভাবে কোনো একটা ব্যবস্থা হতো বলে অর্চনা দেবী সহ গোটা পরিবার আশাবাদী। কারণ, চিকিৎসার অভাবে ছয় বছরের প্রতিবন্ধী কৃষান মালাকারের হাত পা প্রতিদিন ছোটো হচ্ছে বলেও জানান অর্চনা দেবী।