তেলিয়ামুড়াঃ
(হিরন্ময় রায়ের প্রতিবেদন)
No road no vote, অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে সাধারণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত জনজাতি ভোটারদের ভোট বয়কটের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ৭৫ বছরের গৌরবউজ্জ্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এ যেন এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পালন করল গোটা দেশ সহ ত্রিপুরা রাজ্যও। এর পরও ভোট বয়কটের মত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে সাধারণ ভোটার দের, সত্যি অবাক করার মত বিষয়।
তিনটি মৌলিক দাবী কে সামনে রেখে ভোট বয়কট করা এলাকাবাসী অনড় রয়েছেন সিদ্ধান্তে। যতদিন পর্যন্ত তাদের এই দাবী পূরণ হচ্ছেনা ততদিন তারা কোন ভোটে অংশগ্রহণ করবেনা এমনটাই এলাকাবাসীর অভিমত। অমরপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত অম্পি আর ডি ব্লকের অধীন ফুলকো এডিসি ভিলেজের অন্তর্ভুক্ত ছয়টি গ্রাম যথাক্রমে, সনতাং ১,সনতাং ২,সনতাং ৩, নোপাংরোম্বা,চম্পাতলি,এবং গন্ডা ১।
গত ২৬ শে এপ্রিল লোক সভা নির্বাচনে এলাকার ভোটারেরা ভোট বয়কট করার খবর সারা রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয় । সেখান তাদের দাবী ছিল এলাকায় জল, রাস্তা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ এর ব্যবস্থা করে দেওয়া।
প্রসংগত উল্লেখ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৩৭ ইংরেজিতে এই সব এলাকায় দসকি সেলিনি, দশ ঘরিয়া,এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে উল্লেখিত এডিসি ভিলেজ এলাকায় বসবাস করতে এসেছিল হাতে গোনা কয়েকটি জনজাতি পরিবার। আজ ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় প্রায় ৪০০ পরিবারের ১২০০ জন লোকসংখ্যা ।এর মধ্যে ভোটার রয়েছে প্রায় ৬৪৯ এর মত। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করা এই সব এলাকায় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হল জংগলের বাশ বিক্রি,ছড়ার মাছ এবং জুম চাষ। অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরও তাদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানীয় জল এবং বিদ্যুৎসংযোগ করে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি কেও। দীর্ঘ বছর ধরে দাবি করে আসলেও কেও কর্ণপাত করেনি। বাধ্য হয়ে শেষে গগনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয় এলাকার জনগন। নুন্যতম চাহিদা পুরন না হলেও এই সব এলাকায় শিক্ষার হার অনেক ভাল। প্রায় ৮০% যুবক যুবতীরা স্নাতক ডিগ্রী গ্রহন করেছে। অথচ এলাকায় শিক্ষার জন্য রয়েছে কেবল তিনটি সিনিয়র বেসিক স্কুল।এর মধ্যে দুটি ইংরেজি মাধ্যম এবং একটি বাংলা মাধ্যম স্কুল। পরবর্তী শিক্ষা নিতে যেতে হচ্ছে অম্পি কিংবা অন্য কোন জায়গার স্কুলে। এদিকে যাতায়াতের ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারনে অতিরিক্ত খরচ করে নিত্যদিন সমস্যায় ভোগছেন এলাকবাসীরা। নেই কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও। অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য ছুটতে হচ্ছে তৈদু কিংবা অম্পি এলাকায়। গর্ভবতি মায়েরা বা বয়স্ক ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিত্যদিন সমস্যায় ভোগছেন এলাকবাসীরা। ৮০ – থেকে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে। এলাকজুরে নেই রেশনের দোকান। ফলে ১০০ টাকা খরচ করে রেশন সামগ্রী সংগ্রহ করে হচ্ছে তাদের। এত সমস্যার মাঝে আর্থীক দিক থেকে দূর্বল শ্রেনীর মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেহ। রাগে ক্ষোভে এবং কস্টে শেষে তাদের দাবী পুরণের জন্য আজ তারা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে। এখন তাদের দাবী যতদিন পর্যন্ত এর সমাধান হচ্ছে উনারা কোন ভোটে অংশ গ্রহন করবেনা। প্রসংগত উল্লেখ্য সনতাং এলাকার ভোটারেরা গত একমাস পুর্বেই তাদের দাবী জানিয়ে ছিল। তারা বলেছিল লিখিত ভাবে যদি দাবী পূরণ না হয় তবে ভোট বয়কটের পথ বেছে নেবেন। এখন প্রশ্ন হল তার পরও প্রশাসন কেন এই বয়কট আটকাতে সফল হয়নি। তবেকি সদিচ্ছার অভাব ছিল নাকি অন্যকিছু এই প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহল জুড়েভ ঘুরপাক খাচ্ছে । অন্যদিকে অম্পি এলাকার এডিসির এমডিসি সদানন্দ কলই ভোট বয়কট প্রসংগে নিজ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন যে গ্রামবাসীর বক্তব্য সম্পুর্ন সত্য নয়। এটা বিরোধী রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন রাজ্যের বিরোধী দল সি পি আই এম এর একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। তবে যাই হোক ভোট বয়কটের ঘটনা যে সত্য তা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই কারোর।
এখন দেখার তাদের আওয়াজ শুনে নৈতিক দাবি পুরন করতে কি ব্যবস্থা গ্রহন করে প্রশাসন বা সরকার। ।