
মুম্বাই:
রাজনীতিতে নাকি চিরশত্রু বা চিরবন্ধু বলে কিছু হয় না। সকলের মধ্যে সন্ধি হয় সমঝোতা আর বোঝাপড়ার মাধ্যমে। আবার রাজনীতি মানেই নাকি ক্ষমতার লড়াই। সেই লড়াইতে জিততে ভাঙাগড়ার খেলা চলতেই থাকে। ঠিক যেমনটা চলছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। গত প্রায় পাঁচ বছরে সে রাজ্যে অন্তত চার বার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক বার সরকার বদলও ঘটেছে। রবিবারও এক শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানের সাক্ষী রইল মহারাষ্ট্র। যাঁর হাত ধরে মহা-রাজনীতি নতুন মোড় নিল, তিনি এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ার। রবিবাসরীয় দুপুরে আচমকা আট এনসিপি বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে একনাথ শিন্ডে-বিজেপি সরকারের সঙ্গে হাত মেলালেন পওয়ারের ভাইপো। আবার হলেন উপমুখ্যমন্ত্রী। যার জেরে এনসিপির ঘর ভেঙে গেল।বছর ঘুরলেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। রয়েছে লোকসভা ভোটও। রাজনীতির আঙিনায় এই জোড়া যুদ্ধের আগে এনসিপির মতো বিজেপি বিরোধী দলে ভাঙন ভিন্ন মাত্রা যোগ করল। ঠিক এক বছর আগে জুন মাসে শিবসেনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে মহারাষ্ট্রে ‘মহা বিকাশ আঘাডী’ সরকার ফেলে দিয়েছিলেন একনাথ শিন্ডে। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল নতুন সরকার। যার নেপথ্যে বিজেপির ‘কলকাঠি’ ছিল বলে দাবি করে বিরোধীরা। সেই নয়া সরকারের এক বছরের মধ্যেই বিরোধী শিবিরে আবার ভাঙন ধরিয়ে দিল বিজেপি। যদিও এ বার সরকার পড়েনি ঠিকই। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যখন এনসিপি-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি একজোট হওয়ার সলতে পাকাচ্ছে, সেই আবহে বিজেপি সরকারে অজিতের শামিল হওয়ার ঘটনা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে তাদের বিজেপি ‘চাপে’ রাখতে চাইছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও ভাইপোর পদক্ষেপে ‘বিব্রত’ নন বলে জানিয়েছেন শরদ। আক্রমণ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে কংগ্রেসও। শিবসেনার মতো এনসিপির অন্দরেও একই গৃহযুদ্ধ চলবে কি না, সেই নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ার যে বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন— এমন জল্পনা দীর্ঘ দিন ধরেই ডালপালা মেলেছিল মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। গত কয়েক মাসে নানা ঘটনাপ্রবাহে এই জল্পনা অনেক জল-হাওয়া পেয়েছে। রবিবার আচমকা যে সেই জল্পনায় ইতি টেনে চমক দেবেন অজিত, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি মহা-রাজনীতি। রবিবার দুপুরে হঠাৎই অনুগামী বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে যান অজিত। তার পরই হাত মেলান শিন্ডে-বিজেপি সরকারের সঙ্গে। উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন পওয়ারের ভাইপো। তাঁর সঙ্গে আরও আট এনসিপি বিধায়ক শপথগ্রহণ করেছেন। তাঁরা হলেন, ছগন ভুজবল, দিলীপ ওয়ালসে পাটিল, অদিতি টাটকারে, ধনঞ্জয় মুন্ডে, হাসান মুশারিফ, ধরমরাজ বাবারাও আতরাম, সঞ্জয় বাঁসোদে এবং অনিল ভাইদাস পাটিল। অজিত দাবি করেছেন, এনসিপির ৫৩ জন বিধায়কের মধ্যে ৪৩ জনের সমর্থন রয়েছে তাঁর কাছে। বস্তুত, দলত্যাগ আইনের হাত থেকে রেহাই পেতে অজিতের প্রয়োজন ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন। অজিত এ-ও জানিয়েছেন, এনসিপিতে কোনও ভাঙন ঘটেনি। আগামী সব নির্বাচনে তাঁরা এনসিপি-র নাম এবং প্রতীক ব্যবহার করবেন। আগামী ৫ জুলাই এনসিপি নেতাদের সঙ্গে অজিত এবং শরদ শিবির আলাদা আলাদা বৈঠকে বসবে।
অজিতের সিদ্ধান্তে তিনি ‘বিব্রত’ নন বলেই জানিয়েছেন শরদ পওয়ার। বলেছেন, ‘‘আজ যা ঘটল, তাতে আমি একেবারেই বিব্রত নই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়। ১৯৮০ সালে আমাদের ৫৮ জন বিধায়ক ছিলেন। তার পর সবাই ছেড়ে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র ছ’জন বিধায়ক ছিলেন। তার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। যাঁরা আমায় ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁদের কেন্দ্রে হেরে গিয়েছিলেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এটা গুগলি নয়, রবারি (ডাকাতি)। যাঁরা দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছেন এবং শপথ নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’ আগামী ৬ জুলাই একটি বৈঠক ডেকেছিলেন বলে জানান পওয়ার। সেই বৈঠকে দলের অন্দরে কিছু রদবদল করা হত। তার আগেই অজিতরা ভিন্ন অবস্থান নিলেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানান শরদ। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেছেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। বলেছেন, ‘‘দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী এনসিপি সম্পর্কে দু’টি কথা বলেছিলেন। একটি হল, এনসিপি দলটা খতম হয়ে গিয়েছে। তিনি দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন। আমি খুশি যে, আমার দলের কয়েক জন সহকর্মী শপথ নিলেন (এনডিএ সরকারে)।এটা থেকে স্পষ্ট যে, সব অভিযোগ থেকে আমরা মুক্ত। ওঁর (প্রধানমন্ত্রী) প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’ কেন অজিত-সহ এনসিপি বিধায়করা বিজেপি সরকারের সঙ্গে হাত মেলালেন, তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সকলে জানতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পওয়ার। মহারাষ্ট্রের বিরোধী দলনেতা করা হয়েছে এনসিপির জিতেন্দ্র আওহাদকে।
