কৈলাশহরঃ
আবারও রাজ্যে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা। রবিবার রাতে কৈলাশহরে চিকিৎসকের উপর অমানবিক আক্রমণ এর পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ এম্বুল্যান্স ভাংচুরের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে নিন্দার সাথে গোটা কৈলাশহরে চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। পঁচিশ জুন রোববার রাতে কৈলাসহরের মাইলং এডিসি ভিলেজের ঠাকুর সিং পাড়ার ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের সম্মুখে ২০৮বিকল্প জাতীয় সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় মোট ছয়জন পথচারী জখম হবার পর গ্রামবাসীরা জখম হওয়া ছয়জন পথচারীকে স্থানীয় সিংগিরবিল গ্রামের কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ড: সত্যজিৎ দও দুইজনকে মৃত বলে ঘোষণা দেয় এবং চারজনের মধ্যে দুইজনকে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এরপরই উপস্থিত গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে সিংগিরবিলের কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ড: সত্যজিৎ দওকে বেধড়ক মারধর করে, হাসপাতালের এম্বুল্যান্স সহ হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে সবকিছু ভেংগে চুরমার করে দেয়। এমনকি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সমস্ত মেশিন ভেংগে দেয় এবং হাসপাতালের ভিতরে থাকা সেলাইন ও সমস্ত ঔষধ পত্র বাইরে ফেলে দেয়। ড: সত্যজিৎ দও-কে এতটাই মারধোর করে যে, ড: সত্যজিৎ দওের নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয় এবং উনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে ড: সত্যজিৎ দওের অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ হওয়ায় তাকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয় । এই ঘটনায় গোটা মাইলং এডিসি ভিলেজ এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করেছিলো। রোববার রাতেই ঊনকোটি জেলা জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা এবং জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাংগীর বিশাল পুলিশ এবং টি.এস.আর বাহিনী নিয়ে সিংগিরবিলের কনিকা মেমোরিয়াল হাসপাতাল চত্ত্বরে যান। সারা রাত হাসপাতাল সহ গোটা মাইলং এডিসি ভিলেজ এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনী মজুত ছিলো। এই ঘটনায় গোটা ঊনকোটি জেলায় তীব্র আতংক বিরাজ করছে। অপরদিকে পুলিশ রোববার রাতেই ঘাতক গাড়িটিকে কৈলাসহর পুর পরিসদের পদ্মেরপাড় এলাকায় অমিত সিনহার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে কৈলাসহর থানায় নিয়ে গেলেও গাড়ির চালক তথা গাড়ির মালিক অমিত সিনহাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি। এই ঘটনায় ত্রিপুরা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব দেবাশীষ বসু, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড: সুপ্রিয় মল্লিক, স্বাস্থ্য দপ্তরের সহ অধিকর্তা সৌভিক দেববর্মা সোমবার কৈলাসহরে এসে কনিকা মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে ছাব্বিশ জুন সোমবার সকাল দশটায় ঘাতক গাড়ির চালক অমিত সিনহাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবীতে মাইলং এডিসি ভিলেজের গ্রামবাসীরা ঠাকুর সিং পাড়ার ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের সম্মুখে ২০৮বিকল্প জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধের খবর পেয়ে আধ ঘন্টার মধ্যেই অবরোধ স্থলে ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা চলে যান এবং সেখানে অবরোধ কারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি দুরঘটনায় মৃত দুই পথচারী নিকেন্দ্র দেববর্মা এবং বিদ্যাভাগী দেববর্মার মৃতদেহ ময়না তদন্ত করে দুপুর বারোটায় পরিবারের সদস্যদের হাতে তোলে দেয় ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ড: সমরেন্দ্র দেববর্মার চেম্বারে প্রায় দুই ঘন্টা পর বৈঠক শেষে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড: সুপ্রিয় মল্লিক সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, স্বাস্থ্য দপ্তর কোনো ধরনের হিংসায় বিশ্বাসী নয়। স্বাস্থ্য দপ্তর সমাজের সবাইকে নিয়েই চলতে চায়। তবে এই ঘটনার পরে উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।