বিলোনিয়াঃ
ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার। মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী। সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি। ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম। আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম ! বাবা-মায়ের স্থান ভগবানেরও ওপর। আর সেই ভগবানের জন্য ছেলের ঘরে আজ স্থান নেই। কুলাঙ্গার ছেলের যন্ত্রণায় নিজ বসত ঘরে স্থান হচ্ছে না ৭০ উর্দ্ধ অসহায় পিতা মাতার।
বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয় মেয়ের বাড়িতে, সেখানে গিয়েও রেহাই পেলেন না, হামলার শিকার হন কুলাংগার ছেলের হাতে । আর ধৈর্য্যহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত কুলাঙ্গার সেই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় আসেন মামলা করতে। অভাগাদের কপাল, থানাতেও বিচার পেলেন না বৃদ্ধ দম্পত্তি। বিলোনিয়া মহিলা থানা মামলা নথিভুক্ত করে নি । অসহায় বৃদ্ধা মা পরবর্তী সময়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে শেষ পর্যন্ত আদালতের দাবড়ানি খেয়ে মামলা নথিভুক্ত করতে বাধ্য হয় পুলিশ। বিষয় সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে নিজ হাতে গড়া ভিটেমাটি ছাড়া বৃদ্ধ খোকন ভৌমিক সহ তার বৃদ্ধা স্ত্রী কানন ভৌমিক । তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড়ো ছেলে নরেশ ভৌমিকের দাবি সব সম্পত্তি তাকে দিতে হবে । এই সম্পত্তি বড়ো ছেলে নরেশকে না দেওয়ার ফলে জন্মদাত্রী মা ও পিতার উপর বার বার হামলা চালিয়ে, ঘর ছাড়া করলো কুলাঙ্গার ছেলে নরেশ । নিরুপায় হয়ে ছোট মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধ মাতা পিতা।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী রইলো বিলোনিয়া থানাধীন পুরান মতাই এর এক নং ওয়ার্ড এলাকার জনগন । জানা যায়, ঋষ্যমুখ ব্লকের নলুয়া এলাকার পুরানো ভিটেমাটি বিক্রি করে , পুরাতন মতাই এর এক নং ওয়ার্ডে জায়গা কিনে বাড়ি ঘর তৈরি করেছিলেন খোকন ভৌমিক। বড়ো ছেলে নরেশ বিদেশ থাকতেন, বিদেশ থেকে আসার পর ছেলেকে বিয়ে করান, তারপরেই শুরু হয় বিপত্তি । মা-বাবার উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে দেয় কুলাঙ্গার নরেশ । প্রতিনিয়ত বৃদ্ধ মা বাবাকে চাপ দিতে থাকে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য । শুধুমাত্র বড়ো ছেলে নরেশ নয় , নরেশের স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি অত্যাচার সহ হুমকি দিতে থাকে নরেশের নামে বিষয় সম্পত্তি লিখে না দিলে এবং বাড়ি ছেড়ে না গেলে বৃদ্ধ বাবার নামে নিজ পুত্রবধুর শ্লীললতাহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হবে । আরেক ছেলেও থাকে বিদেশে। এতে করে শুরু হয় সংসারে অশান্তি, অশান্তির জেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় বৃদ্ধ পিতা মাতা। নলুয়ায় মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও মেয়ের বাড়িতেই ছেলের হাতে আক্রমণের শিকার হয় বৃদ্ধ মাতা। আদালতের চাপে পুলিশ ৩২৫ ধারায় মায়ের উপর আক্রমণ, ৩০৭ খুনের চেষ্টা, প্রটেকশন সিনিয়র সিটিজেন এক্ট ২৪, ধারায় মামলা রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হয়, কিন্তু মামলা নথিভুক্ত করার পর পুলিশ কোন ধরনের ভূমিকা গ্রহণ না করায় অবশেষে গতকাল অর্থাৎ ১৫ই জুন বৃদ্ধ পিতা-মাতা, বিলোনিয়া দক্ষিণ জেলার জেলাশাসকের নিকট আবেদন রাখেন যে উনাদের যেন পুনরায় নিজ স্বস্থানে অর্থাৎ নিজ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কারণ গত দশ মাস ধরে বৃদ্ধ পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলের আতঙ্কে নিজ বাড়িতে কোন অবস্থাতেই ঢুকতে পারছেন না এবং বড় ছেলের এই ধরনের আচরণ দেখে অবশেষে বৃদ্ধ পিতা মাতা আদালতের শরণাপন্ন হয়ে নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানান, এখন দেখার বিষয় এই সংবাদ প্রকাশের পর বিচার পায় কিনা এই বৃদ্ধ পিতামাতা।