মধুপুরঃ
আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা বিশালগড় মহকুমার একাধিক সীমান্ত এলাকায় যে সক্রিয় তার প্রমান বার বার পাওয়া যাচ্ছে । সমগ্র দেশ ব্যাপী যে এই রেকেড এর বিস্তৃতি সেটাও প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে জানিয়েছে তারা। কিন্তু সব কিছু জেনে বুঝেও রহস্য জনক ভাবে হাত পা গুটিয়ে গ্রীষ্মের দুপুরের ভাত ঘুমের অলসতা কাটিয়ে মাঠে নামছে না পুলিশ। রাতের আঁধারে তো বটেই, প্রকাশ্য দিবালোকেও বিশালগড় মহকুমার মধুপুর থানা এলাকা দিয়ে নিত্যদিন পাচার হয় রাজধানী সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে চুরি হওয়া বাইক, গরু, অবৈধ চিনি, বাজি পটকা, কাপড়, ফেন্সি, ইয়াবা, ব্রাউন সুগার, গাঁজা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ। এ যেন পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য। গত কয়েক মাসে এই এলাকায় নাইজেরিয়া, উগান্ডা, কেমারুন, মায়ানমার, বাংলাদেশ সহ আরও বেশ কিছু দেশের প্রায় অর্ধশত জন নাগরিক আটক হয়েছে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপার করতে গিয়ে। প্রত্যেককে আটক করেছে বিএসএফ এবং স্থানীয় এলাকাবাসীরা। এই ক্ষেত্রে পুলিশের সাফল্য একেবারে নেই বললেই চলে। মঙ্গলবারও একই চিত্র পরিলক্ষিত হল বিশালগড় মহকুমার অন্যতম দূর্নীতিগ্রস্থ থানা তথা মধুপুর থানা এলাকায়। স্থানীয় কৈইয়াঢেপা এলাকায় ফের অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় আটক হয় বাংলাদেশের যশোর জেলার মমতাজ বেগম এবং মিরা খাতুন নামের দুই মহিলা। জানা গেছে সম্পর্কে মা এবং মেয়ে এই দুই মহিলা প্রায় এক বছর যাবৎ ভারতে রয়েছে। তারা বেঙ্গালুরুতে থাকত। তাদের মধ্যে একজন পাসপোর্ট এবং তিন মাসের ভিসা সহ ভারতে প্রবেশ করলেও দীর্ঘদিন যাবত তার ভিসার মেয়াদ উত্তির্ন এবং অপর জনের পাসপোর্টই নেই। তাই তারা বাকা পথে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল । সোমবার বিকেলে বেঙ্গালুরু থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেলে করে আগরতলা রেল স্টেশন হয়ে মধুপুর থানাধীন কৈয়াঢেপা এলাকায় পৌছায় মা মেয়ে । তবে সীমান্ত পারাপারের আগে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীদের খপ্পরে পরে যায় তারা। এলাকা সূত্রে খবর সোমবার বিকেল থেকে সীমান্ত লাগোয়া একটি জঙ্গলে রাতভর এই দুই বাংলাদেশি মহিলার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালায় দুষ্কৃতিকারীরা, তাদের শ্লীলতাহানীর চেষ্টাও করা হয়। প্রান বাঁচাতে চিৎকার করায় সীমান্তে টহলরত বিএসএফ জওয়ানরা ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে বিএসএফ তাদের আটক করে হরিহরদোলা বিওপি তে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার বিএসএফ জওয়ানরা আটককৃত মা ও মেয়েকে মধুপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মধুপুর থানার পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ipc 468/471/420 এবং পাসপোর্ট আইনে একটি মামলা নথিভূক্ত করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে যার নম্বর ১৬/২০২৩ বলে জানিয়েছেন মধুপুর থানার ওসি বিভাষ রঞ্জন দাস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বেঙ্গালুরু কিংবা দেশের অন্যান্য প্রান্তে থাকা লোকেরা কি করে জানে ত্রিপুরা রাজ্যের বিশালগড় মহকুমার মধুপুর থানা এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপার করা সম্ভব? যদিও এই চক্রের সম্পর্কে সবটাই জানেন মধুপুর থানার বড় বাবু থেকে শুরু করে মেজ সেজ সহ সকল বাবুরাই। শুধুমাত্র গোপন রফার জন্যেই এই চক্রের বিরুদ্ধে কোনও ভূমিকা নেই তাদের বলে মনে করছে সচেতন মহল। এই সমস্ত আন্তর্জাতিক চক্রকে আইনের আওতায় না আনলে রাজ্য তথা দেশের অভ্যন্তরীন নিরপত্তা যে লাটে উঠবে তা আর বেশি দূর নয়। এখন দেখার বিশালগড় মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কিংবা সিপাহীজলা জেলা পুলিশ এই চক্রের বিরুদ্ধে ঠিক কি ব্যবস্থা গ্রহন করে।