কৈলাশহরঃ
না এক রকম নয়। দ্বিতীয় এই বিজেপি সরকার যে বিগত পাচ বছরের মত চলছে না তার প্রমান দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। কাজের ধরন দেখানো শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। আপোষহীন প্রশাসন এবং দলের নাম ভাড়িয়ে দুর্নীতি এবং গুন্ডামি যে আর বরদাস্ত করা হবে না তার কাজ শুরু হয়ে গেছে।
অবশেষে মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার ঘোষণার পর কৈলাসহরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্নীতির দায়ে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিবের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত মামলা করা হলো। এই মামলায় পঞ্চায়েত সচিবের পাশাপাশি অনেক বড় প্রভাবশালী রাঘব বোয়ালরা জড়িত রয়েছে বলে অনেকেরই অভিমত। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বারের মতো ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি দলের সরকার প্রতিষ্ঠার পর ২০২৩সালের আট মার্চ মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা শপথ গ্রহণ করেই রাজ্যবাসীকে বলেছিলেন যে, দুর্নীতি মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের দুর্নীতি করা হলে তাকে শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে। মূখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার এই বক্তব্যের পর ঊনকোটি জেলার জেলাসদর কৈলাসহরের প্রশাসনের টনক নড়ে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বিনামূল্যে সরকারি ঘর দেওয়ার আদেশ থাকলেও টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর বন্টন করা হয়েছে কৈলাসহরের গৌরনগর ব্লকের অধীনে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাম বাবুর নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ হবার পর রাম বাবুর কাছ থেকে টাকা দাবী করলে রাম বাবু টাকা দিতে অস্বীকার করলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ রাম বাবুর নামের ঘরটি টাকার বিনিময়ে শ্যাম বাবুকে দেওয়া হয়েছে হয়েছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তী সময়ে রাম বাবু ব্লকে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখে যে, রাম বাবুর নামের বরাদ্দ সরকারি ঘরটি শ্যাম বাবুকে দেওয়া হয়েছে। এরফলে তীব্র ক্ষুব্ধ হয়ে রাম বাবুর মতো অনেকেই জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমারের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সরকারি ঘর বন্টনে ব্যাপক দুর্নীতি গৌরনগর ব্লকের অধীনে শ্রীনাথপুর, টিলাবাজার এবং লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে সংগঠিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে জেলাশাসক ডঃ বিশাল কুমার গৌরনগর ব্লকের বিডিও রামেশ্বর চক্রবর্তীকে থানায় লিখিত মামলা করার জন্য নির্দেশ দেন। জেলাশাসকের নির্দেশ পেয়ে গৌরনগর ব্লকের বিডিও রামেশ্বর চক্রবর্তী শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব হোসেন উদ্দিন এবং টিলাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব রঞ্জিত কুমার দেবের বিরুদ্ধে ইরানি থানায় লিখিত মামলা করেন এবং লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব আব্দুল গোফফারের বিরুদ্ধে কৈলাসহর থানায় লিখিত মামলা করেন। এব্যাপারে ইরানি থানার ওসি যতীন্দ্র দাস সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান যে, গৌরনগর ব্লকের অধীনে শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা কমলা বেগমের নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সরকারি ঘর বরাদ্দ হলেও কমলা বেগমের কাছ থেকে নগদ টাকা দাবী করার পর কমলা বেগম টাকা দিতে অস্বীকার করায় কমলা বেগমকে ঘর না দিয়ে সেই ঘরটি টাকার বিনিময়ে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ গ্রামের অন্যকে দিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি টিলাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম, আবুল কায়ুম, মায়ারুন বিবি, আসকর আলী, নজরুল আলী এবং সিরাজুল ইসলাম নামে এই ছয়জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘর বরাদ্দ হবার পর তাদের কাছ থেকে টাকা দাবী করায় উনারা টাকা দিতে অস্বীকার করায় গ্রামের অন্যদের টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে বলে ইরানি থানার ওসি যতীন্দ্র দাস জানান। এই ঘটনায় শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব হোসেন উদ্দিন এবং টিলাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব রঞ্জিত কুমার দেবের বিরুদ্ধে ইরানি থানায় লিখিত মামলা করেন গৌরনগর ব্লকের বিডিও রামেশ্বর চক্রবর্তী
Byte- যতীন্দ্র দাস (ওসি)।
একইভাবে লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ছায়া দাশ, রতিশ দাশ, আব্দুল রফিক, মীনা বেগম এবং নেশারুন বিবি এই ৫জনের নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সরকারি ঘর বরাদ্দ হবার পর তাদের কাছ থেকে টাকা দাবী করায় উনারা টাকা দিতে অস্বীকার করায় লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে গ্রামের অন্যদের দিয়ে দেয়। এরফলে লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব আব্দুল গোফফারের বিরুদ্ধে কৈলাসহর থানায় লিখিত মামলা করেন গৌরনগর ব্লকের বিডিও রামেশ্বর চক্রবর্তী। উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরের অর্থাৎ ২০২১-২০২২সালে এই দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায়। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে এই তিন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সরকারি ঘর বন্টনে আরও অনেক বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এবং এই দুর্নীতির সাথে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত সচিব নয়, পঞ্চায়েত সচিবের পাশাপাশি গৌরনগর ব্লকের কর্মীরা সহ আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। এখন দেখার বিষয় পুলিশের তদন্তে কি বেরিয়ে আসে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থানায় মামলাটি রেজিস্ট্রি না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেস্টা করে যাচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। যদিও সাত এপ্রিল বিকেল অব্দি দুই থানায় মামলাটি রেজিস্ট্রি হয় নি। তাছাড়া এই ব্যাপারে ইরানি থানার ওসি যতীন্দ্র দাস সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে প্রকাশ্যে বাইট দিলেও এব্যাপারে কৈলাসহর থানার ওসি কোনো ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে করেন নি।