জলপাইগুড়িঃ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর আগেই হাতির হামলায় মৃত্যু হল জলপাইগুড়ির মহারাজঘাটের বাসিন্দা এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের। তার আত্মীয়দের সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সকাল বাবা বিষ্ণু দাসের সঙ্গে বাইকে চড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল অর্জুন। পথে হাতি দেখে বাইক ফেলে পালিয়ে যান বিষ্ণু। কিন্তু পালাতে পারেনি অর্জুন। এক লহমায় দাঁতাল পিষে দেয় তাকে।
জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের মহারাজা ঘাটের বাসিন্দা অর্জুন। সে জলপাইগুড়ির পাচিরাম নাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। অর্জুনের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বেলাকোবা কেবলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের প্রথম ভাষা পরীক্ষা। সকালে বাবার সঙ্গে বাইকে চড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল অর্জুন। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের পাশের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু মহারাজঘাট এলাকায় আচমকা একটি দলছুট দাঁতাল চলে আসে তাঁদের বাইকের সামনে। বিষ্ণুর জামাইবাবু সুব্রত রায়ের কথায়, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় হাতিটা আচমকা তেড়ে আসে। অর্জুনের বাবা বাইক ফেলে পালিয়েছিল। কিন্তু ছেলে পালাতে পারেনি। ওই সময় হাতিটা অর্জুনের উপর হামলা চালায়। ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।’’ বিষ্ণুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে সংজ্ঞা হারান তিনি।
এই ঘটনা নিয়ে বৈকুণ্ঠপুর ডিভিশনের ডিএফও হরি কৃষ্ণণ বলেন, ‘‘বাইকে চড়ে বাবা এবং ছেলে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটি এই বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেই সময় হঠাৎ হাতি চলে আসে। ছেলেকে ছেড়ে বাবা পালিয়ে যায়। হাতির আক্রমণে ছেলের মৃত্যু হয়।’’ অর্জুনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। মিল্টন দাস নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রতি বছর হাতির হামলা হলেও বনদফতর কোনও দায়িত্ব নেয় না। এই ভাবে কারও মৃত্যু হওয়ার পর চাকরি দিলেই কি সান্ত্বনা পাওয়া যায়?’’ হাতির পদপিষ্ট হয়ে অর্জুনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। মহারাজঘাটে তার বাড়িতে এখন লোকারণ্য। পৌঁছেছেন পুলিশ এবং বনকর্মীরা। নিহত ছাত্রটির পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়।